এ নামাযের সময় হল, এশার নামাযের পর থেকে নিয়ে ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত। উক্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়ে এ নামায আদায় করবে; যেমন ইতিপূর্বে খারেজা ইবনে হুযাফা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে শেষ রাত্রে অর্থাৎ ফজরের পূর্বে আদায় করা উত্তম। ছহীহ হাদীছে প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো রাতের প্রথম ভাগে কখনো দ্বিতীয় ভাগে এবং অধিকাংশ সময় শেষ ভাগে বিতর নামায পড়েছেন।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مِنْ كُلِّ اللَّيْلِ قَدْ أَوْتَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَوَّلِ اللَّيْلِ وَأَوْسَطِهِ وَآخِرِهِ فَانْتَهَى وِتْرُهُ إِلَى السَّحَرِ
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাতের প্রত্যেকভাগে রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামায পড়েছেন। রাতের প্রথমভাগে, রাতের মধ্যভাগে অতঃপর রাতের শেষভাগে বিতর পড়া তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়।
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ خَافَ أَنْ لا يَقُومَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ فَلْيُوتِرْ أَوَّلَهُ وَمَنْ طَمِعَ أَنْ يَقُومَ آخِرَهُ فَلْيُوتِرْ آخِرَ اللَّيْلِ فَإِنَّ صَلاةَ آخِرِ اللَّيْلِ مَشْهُودَةٌ وَذَلِكَ أَفْضَلُ
যে ব্যক্তি এই আশংকা করে যে, শেষ রাতে নফল নামায পড়ার জন্য উঠতে পারবে না, তবে সে যেন রাতের প্রথমভাগেই বিতর নামায পড়ে নেয়। আর যে ব্যক্তি শেষ রাতে ক্বিয়াম করার আগ্রহ রাখে সে যেন শেষ রাতেই বিতর নামায পড়ে। কেননা শেষ রাতের নামাযে ফেরেশতাগণ উপস্থিত হন। আর এটাই উত্তম।
عَنْ عَبْدِاللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِي اللَّه عَنْهمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اجْعَلُوا آخِرَ صَلاتِكُمْ بِاللَّيْلِ وِتْرًا
আবদুল্লাহ্ বিন ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা তোমাদের রাতের নামাযের সর্বশেষে বিতর নামায আদায় করবে।
রাতের শেষভাগে বিতর নামায পড়া মর্যাদা সম্পন্ন ও উত্তম হওয়ার জন্য নিম্ন লিখিত হাদীছটিতেও ইঙ্গিত পাওয়া যায়ঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا مَضَى شَطْرُ اللَّيْلِ أَوْ ثُلُثَاهُ يَنْزِلُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ هَلْ مِنْ سَائِلٍ يُعْطَى هَلْ مِنْ دَاعٍ يُسْتَجَابُ لَهُ هَلْ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ يُغْفَرُ لَهُ حَتَّى يَنْفَجِرَ الصُّبْحُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রাতের অর্ধেক অথবা দুই তৃতীয়াংশ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’আলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন অতঃপর বলেন, আছে কি কোন প্রার্থনাকারী তাকে প্রদান করা হবে, আছে কি কোন আহবানকারী তার দুআ কবূল করা হবে, আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী তাকে ক্ষমা করা হবে। এভাবে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।
কিন্তু কোন লোক শেষ রাতে জাগতে পারবে না যদি এরকম আশংকা রাখে তবে তার জন্য রাতের প্রথমাংশেই বিতর পড়ে নেয়া উত্তম।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِي اللَّه عَنْه قَالَ أَوْصَانِي خَلِيلِي بِثَلاثٍ لا أَدَعُهُنَّ حَتَّى أَمُوتَ صَوْمِ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَصَلاةِ الضُّحَى وَنَوْمٍ عَلَى وِتْرٍ
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার প্রাণপ্রিয় বন্ধু আমাকে তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমি উহা পরিত্যাগ করব না। ১) প্রত্যেক মাসে তিনটি নফল রোযা (প্রত্যেক আরবী মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ) ২) চাশতের নামায (ছালাতুয্ যুহা), ৩) নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে বিতর নামায পড়া।
হাফেয ইবনু হাজার বলেন, এ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে বিতর পড়া মুস্তাহাব। এটা ঐ ব্যক্তির জন্য যে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয়ে বিতর পড়ার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকবে না।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতরের শেষ সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَوْتِرُوا قَبْلَ أَنْ تُصْبِحُوا
আবু সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ফজর হওয়ার পূর্বে তোমরা বিতর নামায আদায় করে নাও।
অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَادِرُوا الصُّبْحَ بِالْوِتْرِ
ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সকাল হওয়ার আগেই তোমরা দ্রুত বিতর পড়ে নাও।
কেননা ফজর উদিত হয়ে গেলে রাতের নামাযের আর সময় অবশিষ্ট থাকে না।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ فَقَدْ ذَهَبَ كُلُّ صَلاةِ اللَّيْلِ وَالْوِتْرُ فَأَوْتِرُوا قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ
ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ফজর উদিত হয়ে গেলে রাতের সকল নামায এবং বিতর
নামাযের সময় শেষ হয়ে যায়। অতএব তোমরা ফজরের পূর্বেই বিতর নামায আদায় করে নাও।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন