বিতর নামাজ

ভূমিকা :  


الْحَمْدُ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَهْدِهِ اللَّهُ فَلا مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلا هَادِيَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ 

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلا تَمُوتُنَّ إِلا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ) 

(يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا ) 

(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوااتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلا سَدِيدًا يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا ) 


ভারত উপমহাদেশের মুসলিম ভায়েরা রুটি-রুজির সন্ধানে যখন সঊদী আরব আগমণ করেন, তখন এখানে তারা ইবাদত-বন্দেগীর বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত নিয়মের অনেক ব্যতিক্রম লক্ষ্য করেন। তম্মধ্যে বিতর নামায অন্যতম। এ নামায আমাদের দেশে সাধারণতঃ যে নিয়মে পড়া হয় তার সম্পূর্ণ বিপরীত নিয়ম তারা এদেশে দেখতে পান। বিশেষ করে রামাযান মাসে যখন জামাতের সাথে বিতর নামায পড়তে হয়। তখন তারা পেরেশান ও হয়রান হয়ে নিজ দেশের ইমাম ও মুফতী সাহেবানকে পত্র মারফত বা ফোন করে জিজ্ঞেস করেন 

যে, আমাদের করণীয় কি? তারাও নিজেদের মতাদর্শ অনুযায়ী জবাব পাঠিয়ে দেন, ‘ওদের সাথে বিতর পড়বে না, তোমরা আলাদা বিতর পড়ে নিবে।’ এজন্য দেখা যায়- বিতর শুরু হওয়ার সময় বিরাট একটি দল, জামাত থেকে বের হয়ে কেউ মসজিদে কেউ নিজ ঘরে গিয়ে বিতর নামায আদায় করে থাকেন। 

সঊদী আরবের জুবাইল দা’ওয়া সেন্টারে দাঈ ও শিক্ষক হিসেবে আগমণ করার পর থেকে এমন কোন উপলক্ষ্য নেই যে, আমাকে উক্ত বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়নি। আমার জ্ঞান অনুযায়ী আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ছহীহ সুন্নাহর অনুসরণে তার জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছি এবং করে যাচ্ছি। ফলে সত্যানুসন্ধানী ও নবী প্রেমী লোকেরা সত্য গ্রহণ করেন এবং সে অনুযায়ী নিজেদের আমলকে শুধরে নেন। আমার জানা মতে এরকম লোকের সংখ্যা অগণিত যারা এক্ষেত্রে নিজেদের আমলকে ছহীহ সুন্নাত মোতাবেক বিশুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। (আল্লাহ তাদেরকে আরো তাওফীক দিন।) 

উপরোক্ত কারণে এবং সত্যানুসন্ধানী ভাইদের বার বার অনুরোধ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে এবিষয়ে দলীল ভিত্তিক একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ প্রণয়ন করতে। তাছাড়া ছহীহ 

সুন্নাতের প্রচার-প্রসার ও তার খেদমতের একটি দুর্বার আগ্রহ তো নিজের মধ্যে রয়েছেই। তাই পুঁজি অল্প হলেও সে পথে পা বাড়াতে দুঃসাহস করেছি। দুআ করছি হে আল্লাহ তুমি আমাকে সত্য উদ্ঘাটনে তাওফীক দিও। তোমার প্রিয় হাবীব নবী মুহাম্মাদ (ছাল¬াল¬াহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম)এর সুন্নাতের খেদমতে অংশ নিয়ে রোজ ক্বিয়ামতে তাঁর শাফায়াত নসীব করো। 

এই পুস্তকটি পড়ার পূর্বে সম্মানিত পাঠক-পাঠিকার নিকট আমার নিবেদন, আমাদের সকলের উচিত হচ্ছে সার্বক্ষণিক নিম্ন লিখিত আয়াত ও হাদীছটি মানস্পটে রাখা।


মহান আল্লাহ বলেন, 

]وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالا 


আলাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল কোন আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোন অধিকার নেই। যে ব্যক্তি আলাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।  


আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ছালালাহু আলাইহি ওয়া সাল¬াম) বলেছেন, 

كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلا مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى


আমার উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু ঐ ব্যক্তি নয় যে জান্নাতে যেতে করে। তাঁরা বললেন, কে এমন আছে জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার অবাধ্য হবে সেই জান্নাতে যেতে A¯^xKi করবে।  

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছটি যে ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত জীবনের চলমান পথে স্মরণ রাখবে তার জন্য ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান মান্য করা সহজসাধ্য হবে।

এ জন্যই আমাদের পূর্বসূরী মহামান্য ইমামগণ হাদীছ সম্পর্কে যে অমূল্য বাণী পেশ করে গেছেন-তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত নবী প্রেমীদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। যেমনঃ ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) [মৃত্যু ১৫০ হিঃ] বলেন, হাদীছ বিশুদ্ধ সাব্যস্ত হলে ওটাই আমার মাযহাব। 

ইমাম মালেক (রহঃ) [মৃত্যু ১৭৯ হিঃ] বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির কথা গ্রহণযোগ্য ও প্রত্যাখ্যানযোগ্য কিন্তু শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সবকিছুই গ্রহণযোগ্য। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) [মৃত্যু ২০৪হিঃ] বলেন, আমি যা কিছু বলেছি তার বিরুদ্ধে নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  থেকে ছহীহ সূত্রে কোন হাদীছ এসে গেলে নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীছই হবে অগ্রগণ্য, অতএব তোমরা আমার অন্ধানুকরণ করো না। ইমাম আহমাদ বিন n¤^j (রহঃ) [মৃত্যু ২৪১ হিঃ] বলেন, তুমি আমার তাক্বলীদ (অন্ধানুসরন) করো না, মালেক, শাফেয়ী, আওযায়ী, ছওরী এদের কারো অন্ধানুকরণ করো না; বরং তাঁরা যেখান থেকে (সমাধান) গ্রহণ করেছেন তুমিও সেখান থেকেই গ্রহণ কর।

সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাদের প্রতি আমার অনুরোধ, মাযহাবী গোঁড়ামী পরিহার করে আসুন আমরা একনিষ্ঠভাবে কুরআন-সুন্নাহ্‌ ও সালাফে সালেহীনের নীতির অনুসরণ করি। পাস্পারিক ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে কুরআন-সুন্নাহ্‌র ছায়াতলে সমবেত হই। গড়ে তুলি ঐক্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের অনন্য দৃষ্টান্ত।

বইটি প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি হাদীছের রেফারেন্স উল্লেখ করে তার b¤^i দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ছাপায় বিভিন্ন b¤^i থাকতে পারে, ফলে পাঠক তাতে বিভ্রান্ত হতে পারেন, তাই প্রতিটি হাদীছের অধ্যায় ও অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে যাতে করে মিলিয়ে নেয়া সহজ হয়। আর সাধ্যানুযায়ী সবগুলো হাদীছ ছহীহ-বিশুদ্ধই নির্বাচন করা হয়েছে। মাযহাবী গোঁড়ামী মুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ, নির্ভরযোগ্য ও মুহাক্কেক আলেমদের উক্তি উল্লেখ করা হয়েছে।

এই জন্য সহৃদয় পাঠক-পাঠিকাদের প্রতি আবারো সনির্বন্ধ নিবেদন, আপনাদের দৃষ্টিতে কোন ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন এবং প্রমাণ-পঞ্জি ও রেফারেন্সসহ সংশোধনের পরামর্শ দিবেন, উহা ধন্যবাদসহ সাদরে গ্রহণ করা হবে। (ইনশাআল্লাহ্‌) বইটিকে সুসজ্জিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনী ও পরামর্শ দান করেছেন, জুবাইল দা’ওয়া সেন্টারের সুযোগ্য দাঈ শায়খ আবদুল্লাহ্‌ বিন শাহেদ এবং দাম্মাম ইসলামী কাল্‌চারাল সেন্টারের সনামধণ্য দাঈ শায়খ মুতিউর রহমান সালাফী। হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে তাদেরকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। হে আল্লাহ্‌ এই বইয়ের লেখক, সম্পাদক, পাঠক-পাঠিকা ও ছাপানোর 

কাছে সহযোগিতা দানকারী সকলকে সর্বোত্তম পুরস্কারে ভূষিত করো। ক্বিয়ামতের মাঠে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পবিত্র হাত থেকে হাওযে কাউছারের পানি পান ও তাঁর শাফায়াত লাভে ধন্য করো। আমীন॥

নিবেদক,

মুহাঃ আবদুল্লাহ্‌ আল কাফী

লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

দাঈ, জুবাইল দা‘ওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার

পো: বক্স নং ১৫৮০, ফোনঃ ০৩-৩৬২৫৫০০

সঊদী আরব।



  . সূরা আহযাব- ৩৬

  . বুখারী, অধ্যায়ঃ কুরআন-সুন্নাহ্ আঁকড়ে ধরা, অনুচ্ছেদঃ রাসূলুলাহ্ (ছালালাহু আলাইহি ওয়া সাল­াম)এর সুন্নাতের অনুসরণ, হা/৬৭৩৭।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Subscribe Our Newsletter