দৈনন্দিন জীবনে একজন মুসলমানের উপর ইসলামের দ্বিতীয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন নামায শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্তই ফরয; এর অতিরিক্ত নয়। এই পাঁচ ওয়াক্তে মোট ১৭ (সতের) রাকাত নামায ছাড়া আর যত নামায আদায় করার হাদীছ পাওয়া যায় তা সবই নফলের অন্তর্ভূক্ত। ঐ সমস্ত নামাযের মধ্যে কোনটার চাইতে কোনটার গুরুত্ব বেশী হওয়ার কারণে উলামায়ে দ্বীন কোনটার নাম দিয়েছেন সুন্নাতে মুআক্কাদা, কোনটা সুন্নাতে যায়েদা এবং কোনটা সাধারণ নফল নামায।
যে সমস্ত নামায আদায় করার ব্যাপারে অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং তাতে অফুরন্ত ছওয়াবের উল্লেখ হয়েছে তাকে বলা হয় সুন্নাতে মুআক্কাদা নামায। তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট ১২ রাকাত নামায, তাহাজ্জুদ নামায, বিতর নামায, চাশতের নামায, তওয়াফ শেষ করে দু’রাকাত নামায, ঈদের নামায ইত্যাদি।
এগুলোর মধ্যে বিতর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ নামায। এর গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায় তা ওয়াজিবের কাছাকাছি। ওয়াজিবের অর্থ বহণ করে এরকম কিছু হাদীছও পাওয়া যায়, তার পক্ষে। কিন্তু এ সম্পর্কে সমস্ত হাদীছ একত্রিত করলে বুঝা যায় তা ওয়াজিব নয়; বরং উহা সুন্নাতে মুআক্কাদা।
বিতর নামাযের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে অনেকগুলো হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তম্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপঃ
عَنْ خَارِجَةَ بْنِ حُذَافَةَ الْعَدَوِيُّ خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ أَمَدَّكُمْ بِصَلاةٍ وَهِيَ خَيْرٌ لَكُمْ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ وَهِيَ الْوِتْرُ فَجَعَلَهَا لَكُمْ فِيمَا بَيْنَ الْعِشَاءِ إِلَى طُلُوعِ الْفَجْرِ
১) খারেজাহ্ ইবনে হুযাফাহ্ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের নিকট এসে বললেন: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে একটি নামায দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। উহা তোমাদের জন্য লাল উটের চাইতে উত্তম। তা হচ্ছে বিতর নামায। এ নামায আদায় করার জন্য তিনি সময় নির্ধারণ করেছেন, এশার নামাযের পর থেকে ফজর উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
عَنْ عَلِيٍّ رَضِي اللَّه عَنْه قَالَ أَوْتَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ قَالَ يَا أَهْلَ الْقُرْآنِ أَوْتِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وِتْرٌ يُحِبُّ الْوِتْرَ
২) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিতর নামায পড়েছেন এবং বলেছেন, হে কুরআনের অনুসারীগণ তোমরা বিতর নামায পড়। কেননা আল্লাহ তা’আলা একক, তিনি বিতর নামায পছন্দ করেন।
৩) রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ নামায গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। এমনকি সফরে গেলেও এ নামায পড়া ছাড়তেন না।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِي السَّفَرِ عَلَى رَاحِلَتِهِ حَيْثُ تَوَجَّهَتْ بِهِ يُومِئُ إِيمَاءً صَلاةَ اللَّيْلِ إِلاَّ الْفَرَائِضَ وَيُوتِرُ عَلَى رَاحِلَتِهِ
ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় ফরয নামায ব্যতীত রাতের নফল নামায ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিজ বাহনের উপর বসে- বাহন যে দিকে যায় সে দিকেই- পড়তেন। তিনি বিতর নামায আরোহীর উপর পড়তেন।
কিন্তু ফরয নামাযের সময় হলে তিনি তা বাহনের উপর পড়তেন না।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِاللَّهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي عَلَى رَاحِلَتِهِ حَيْثُ تَوَجَّهَتْ فَإِذَا أَرَادَ الْفَرِيضَةَ نَزَلَ فَاسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আরোহী যে দিকেই যাক না কেন রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে দিকেই মুখ করে তার উপর বসে নফল নামায আদায় করতেন। কিন্তু ফরয নামায আদায়ের ইচ্ছা করলে অবতরণ করতেন এবং কিবলামুখী হয়ে নামায আদায় করতেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন